Saturday, 13 January 2018

যেওনা পৌষ

পৌষ আগলানো ------+--------------- প্রণব ভট্টাচার্য পৌষ কে তো পালাতে দিলে চলবেনা। আগলাতে হবে।পৌষ যে পেটের মাড়ি। ভাত দেবার মাস। খামারে খামারে নতুন ধান।ঝড়ানো হচ্ছে। এখন অবশ্য সব মেসিনে। একটানা ঘড়ঘড় আওয়াজ। আর পাটায় ধান পেটানোর একটা সুন্দর তাল ছন্দের আওয়াজ ছিল।বেশ অন্যরকম লাগতো। তা সে তো আর ফেরার নয়।সে যাক। সবাই যেমন পালায় - পৌষ ও পালাবে। সামনেই সংক্রান্তি। জানি পৌষ তুমি পালাবে।কিন্তু তোমার সঙ্গে রাত জাগব। খুব ঠাণ্ডা। আগুন জ্বালাবো। খড়কুটো শুকনো ডালপালা জোগাড় করে রেখেছি।চাষিবাসি গরীব পাড়ার মেয়েগুলো সারা মাস ধরে ' তুসু' পুজো করেছে।কত গান গেয়েছে।ধান দুব্বো গাঁদা ফুল দিয়ে মাটির সরায় তোমার আটন পেতেছে। ঊলু দিয়ে শাঁখ বাজিয়ে পুজো শেষ করেছে। আজ আগলানো র রাত। সারা রাত গান হবে আগুনের ধারে বসে। এখন তো ধরো মাইক চাই। সারারাত পাড়ায় পাড়ায় মাইক। রাত না জেগে উপায় আছে।আমরা জাগিয়ে রাখব সারা গাঁ কে। পৌষ এ তোমার বিদায় সংবর্ধনা।এ বছরের। খুশী মনে আবার এসো। সবাই কে ভাত দিও। কেউ যেন না খেয়ে মরে। এই আমাদের প্রার্থনা গো। -------------------------+------------------

Tuesday, 9 January 2018

কার কি এসে যায়

বড় দুর্দশা এদের -----------------------প্রণব ভট্টাচার্য এদেশে মহাবীর হনুমান জী র মন্দিরের বোধ হয় অভাব নেই। যদি বা এখানে ওখানে ফাঁক ফোকর থেকে থাকে তা আশা করি সামনের বছর গুলিতে ঠিক ই ভরে যাবে। এদিকে জ্যান্ত হনুমান গুলির কি দশা - কি চরম খাদ্যাভাবে এরা ভুগছে। সংখ্যায় বেড়েছে প্রচুর। তাদের বাসা প্রাচীন বৃক্ষ গুলি প্রায় নেই ই। প্রাচীন গাছপালা সব কেটে ফাঁক। জংগল ভুমি তে আম জাম পিয়াল মহুয়া হরিতকি বহেরা ইত্যাদি ফল পাকুরের গাছ আর নাই। নাই সে অনেক দিন ই। এর মাঝে বন বিভাগ বিদেশ থেকে শিক্ষা গ্রহন করে সরকার পঞ্চায়েত এর মাধ্যমে ব্যাপক বন সৃজন করেছেন। লাগিয়েছেন ইউক্যালিপটাস আর ( আহা) সাধের সোনাঝুরি। এদের ফুল পাতা কিছুই খাওয়া যায় না। আর চাষি দের তো চাষ ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থা। মাঠে সব্জী ও নেই। যে দু চারটে ছিঁড়ে খাওয়া যায়। নিম পাতা শিরীষ পাতা কি কাঞ্চন পাতা তাও মিলছেনা। কি ম্লান মুখে হেথা হোথা ছড়িয়ে বসে রয়েছে ওরা। মুখের অভিব্যক্তি যেন অসহায় ভাবে বলছে মানুষ তোমরা আমাদের জন্য কিছু কর। মরে যাচ্ছি যে। অসহায় অবস্থায় মনুষ্যেতর জীবেরা মানুষের ই সাহায্য চায় কিন্তু। খিদের জ্বালায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে। ক্ষিপ্ত হয়ে মানুষ কে জ্বালাতন করছে। প্রবল লাফালাফি করছে। ঘরদোর এর অবস্থা খারাপ করে দিচ্ছে। সব ই ঠিক। কিন্তু মূল কারন খাদ্যাভাব। আমি আর কি করতে পারি। কষ্ট পাচ্ছি। এদের জন্য ভাববার মতো যদি কেউ থেকে থাকেন তাঁদের কাছে আমার এই লেখাটা যদি- যদি পৌঁছাত। -- ----+------------+----------

কে বোঝে কার কষ্ট

এদের কষ্ট কে যে বোঝে -------------------- প্রণব ভট্টাচার্য এই সময় কালের মধ্যে আমাদের গাঁ ঘরের বাড়ি ঘর দোরের চেহারা অনেক বদলে গিয়েছ। বদল স্বাভাবিক। আর তা মানতেও হবে। কিন্তু- - চাষবাস করে বেঁচে থাকা গাঁ য়ের মানুষ দের গোয়াল ঘর ছিল। গোয়াল ঘরের পিছনে দিনের বেলায় গোরু ছাগল দের বেঁধে রাখার জন্য ছিল গোয়াল চালা। বর্ষা বাদলে বা শীতের রাতে সেখানেই আশ্রয় নিত কুকুর ছাগল ভেড়া ইত্যাদি রা। হঠাৎ বৃষ্টি এলে পথচারী রাও মাথা গুঁজত। গোয়ালঘর আর প্রায় নাই।পিছনের চালা তো নাই ই। গো চারন ভূমি ও আর নাই। ঘরে বলদ পুষে চাষ আর পোষায় না। সব ট্রাক্টর দিয়েই হচ্ছে। ঘরে বেঁধে ছাগল কে খাওয়ানো র লতা পাতা ডালপালা ই আর কোথা। চরে আর খাবে কি। একপাল ছানা পোনা নিয়ে মা কুকুর টার করুন দশা। কোথাও জায়গা পাচ্ছেনা। এই ঠাণ্ডা তে যে কোথায় একটু জায়গা মেলে।এদিক ওদিক করছে। ঠাঁই নাই।গাছতলাতে শুকনো পালা পাতা র উপরে কোন রকমে গুটিসুটি। বড় জাড়। অথচ এরাই রাত জেগে গাঁ ঘর পাহারা দেয়। দুটো খেতেও কেউ দেয়না। আবার জায়গা দেবে মাথা গোঁজার। অথচ সেই মানুষ কেই ভরসা করে। বহু বহু পুরনো বন্ধু। সেই যে প্রথম পোষ মেনেছিল মানুষের। কি করে ছেড়ে যায়। --------------+-----------------+-------------

যা কিছু হারায়

আর কি হারালো -------------------------- প্রণব ভট্টাচার্য ।            গাঁ ঘরে রাস্তা বলতে তো কিছু ছিলনা। সে তো এই চল্লিশ বছর আগে মাত্র। ছিল কুলি। তাই পথ। আবার বর্ষা য় জল যাবার চওড়া নালা। যাই হোক - তাই সই।তাতেই গাঁয়ের লোকের চলে যেত। আর না গিয়েই বা উপায় কি। গাঁয়ের ভিতরে উঁচু পাকা রাস্তা আর বানাচ্ছে কে। অতএব গরমে ধুলো ওড়া। আর বর্ষায় কাদা মাখা পা। তাই এক বালতি জল পা ধোয়ার জন্য দরজার পাশে নামানো ই থাকতো। হাঁ তবে গাঁয়ের ছেলেদের একটা ভাল খেলা হত বর্ষার সময়ে।কুলি দিয়ে অবিরল জলের স্রোত। আর পাশের শিব মন্দির এর উঁচু দাওয়া থেকে সেই জলে ঝাঁপ। পুকুর গোড়ে ভাসিয়ে জল। মাছ ও ভেসে যাচ্ছে। ওস্তাদ রা ছেড়ে দেবে। ধরছে। মাথায় চটের বস্তার টোপা চাপিয়ে মেয়েরা কুলি থেকেই জল নিয়ে যাচ্ছে। যাই হোক এ নিয়েই গাঁ ছিল। বড় রাস্তা বা কুলি র ধারে মানে ঠিক মোড়ের উপরে সম্পন্ন গৃহস্থ বাড়ি। মূল ঘর রাস্তার দিকে পিছন করে হলেও রাস্তার দিকে মুখ করে একটা বৈঠক খানা ঘর থাকতো। সামনে বারান্দা।হয়তো দু দিকে বসার জন্য বান্ধানো ধাপ। গল্প তো চাই। আড্ডা। পরচর্চা পরনিন্দা র মতো জমাটি বিষয় আরকি হতে পারে। অন্য গপ্পোও যে হতো না তা বলা যাবেনা। তাস পাশা ও হত। সন্ধ্যায় অনেকে ই গলা ভেজাতেন। হারমনিয়াম তবলা ও কোথাও কোথাও বেজে উঠত। সংগে কন্ঠসাধন। এই বৈঠক খানা গুলি ই ছিল গাঁয়ের গপ্পকথার উৎস কেন্দ্র। পরদিন সব আসর ই সব আসরের খবর নিত।খবর লেন দেন এর লোক ও ছিল ঠিকঠাক। ভালো খবরে তাদের একটু বেশী ডোজ পাওনা হতো। সারা গাঁ ই মোটামুটি সব আসরের খবরা খবর নিয়ে তারপর মেতে থাকত। এই ই ষোলআনা বিনোদন।

Saturday, 6 January 2018

এপার- ওপার : মাঝে নদী

এপার - ওপার : মাঝে নদী। --------------------- প্রণব ভট্টাচার্য ওপারে জয়দেব - কেন্দুলি। এপারে শিবপুর এবং চারপাশের অনেকগুলি গ্রাম। শিবপুর থেকে রাস্তা চলে যায় দুর্গাপুর। মাঝে নদী। নদ - অজয়। অজি ; অজাবতী;। নানা প্রাচীন নাম তার। ওপার থেকে এপারে আসছেন জয়দেব কবি; আসছেন কবি বিল্বমঙ্গল। আসছেন দামোদর চন্দ্র ব্রজবাসী। কেউ আসছেন সাধনার জন্য ; কেউ তাঁর প্রিয় রমণী র কাছে। কেউ জমিদারি তদারকি তে। বাউল ফকির বৈষ্ণব রা এপার ওপার করছেন ই। আর চাষি বাসি সাধারণ মানুষ তাদের তো একদিন পারাপার না করলে চলেনা। কেন্দুলি র হাটবাজার দোকান দানি। আড্ডা তো জমে ওখানেই। তমালতলায় বাউলের আখড়ায় সন্ধ্যায় গান জমে ওঠে। আবার কদমখন্ডী মহা শ্মশান এ দাউদাউ চিতা জ্বলে।ওখানে শবদেহ দাহ হলে নাকি নিশ্চিত স্বর্গযাত্রা। মানুষের বিশ্বাস। শিবপুর গঞ্জ।ধান চালের আড়ত। দোকানপাট। অনেক পরে এখান থেকে বাস চলল বর্দ্ধমান। ভায়া উখড়া- অন্ডাল। বেশ ঘুরে ঘুরে। একবারই যায়। আসে।লাউদোহা ; মাধাইগঞ্জ এর মিষ্টি। আহা তার স্বাদ। অন্ডালের জিলিপি। মুচমুচে ভাজা। সংগে না নিয়ে ফিরলে চলে। কাঁটাবেড়ে হাটতলা জমে। বিকেলে।ঐ বিজড়ে- শোভাপুর ; ধবনী জামবন ; বড়গড়ে প্রভৃতি চারপাশের গাঁ ঘরের মানুষেরা জোটে। চা শিঙাড়া জিলিপি যোগে গল্প জমে। সাউ দের মাতালশাল ও জমে ওঠে।এলাকার সব চোরডাকাত দের ফন্দিফিকির এর ঐটিই ভালো জায়গা। রাজহাট এর হাঁড়িরা তো বিখ্যাত। ডাকাত দের মোড়ল ঐ গাঁয়েরই। ওদিকে জংগল ঘেরা গাঁ বিষ্টুপুর এর পুবের জংগল এর ভিতর দিয়ে সরু পথে অনেকটা গিয়ে তবে দেবী শ্যামারূপার থান। দিনের বেলাতেই একা যায় সাধ্যি কার। ঘোর জংগল। দিনেও মশাল জ্বালাতে হয়। গো- বাঘার ভয় আছে। সাথে লোক নিয়ে পুরোহিত ব্রাহ্মণ কে যেতে হয়। মন্দিরে পূজার ঘণ্টা বাজে। নিত্যপূজা তাঁর। জামবন এর রায় বাড়িতে গানের আসর বসে।কৃষ্ণযাত্রা র গান।কাজলাডিহি থেকেও শিখতে যায় কেউ কেউ।আর কাঁটাবেড়ে : ধবনী ; থেকে তো গায়ন বাজনদার রা আসেনই। সারা দিন রাত চর্চা চলে। ধবনীর কণ্ঠমশাই এর বিখ্যাত দল শান্তিনিকেতন এর পৌষমেলায় কৃষ্ণযাত্রা পালা কংস বধ গাইতে গেছেন। জয়দেব মেলা এলো বলে। মেলার বাজন বেজেই গেছে। মেলায় গান আছে। পালাগান। কাঙ্গাল ক্ষেপার আখড়ায় এবার। জামবন এর রায়বাড়ি তৈরি হচ্ছে জোরকদমে। নদীতে জল কমে গেছে। বাঁশখুঁটি দিয়ে নদীর উপরে সাঁকো বানানো হচ্ছে। এবার এপারওপার যাতায়াত হবে। আহা। মানুষের মনে আনন্দ। ----------------+------+--------------------