Tuesday, 13 July 2021

।।কথা - সাতকাহন।। ২৮ অধ্যায়

।। কথা - সাতকাহন।। ২৮ অধ্যায়
ভবিষ্যতে এ ছেলেকে দেখবে কে। তার তো কোন আত্মীয় এখানে নাই। চাল চুলো কিছু নাই।   আত্মীয় স্বজনেরা একসাথে এখানে গ্রামের বাড়িতে 
 এলে থাকার খুব অসুবিধা হয়ে যায়।তখন নানা আত্মীয়ের এ বাড়িতে আসার চল ছিল। শ্রীচন্দ্রপুরের  শ্যামা ঠাকুমা রা আসতেন। তাঁর মেয়ে তরু মাসীকে নিয়ে।  নানা জায়গায় চালাঘরে বা বারান্দায় ভাগাভাগি করে থাকতে হত সবাইকে
মিলে মিশে  কখনও বা পশ্চিমে র একচালা বারান্দা ঘরে ও কাউকে  জায়গা নিতে হয়। উত্তর দিক থেকে সে চালাঘরে আবার মাঝে মাঝে সাপ এসে ও ঢোকে।  সেই ভয় নিয়েই
মাটিতে তাল পাতার চাটাই মানে তালাই কাঁথা পেড়ে ঘুমাতে হত । একসময় ঘুম আসে। এসেই যায়। এ নিয়ে কারও কোন ক্ষোভ বিক্ষোভ ছিলনা। 
কোন দুর্ঘটনা অবশ্য ঘটেনি কখনও। 
 দিনের দিকে অযোধ্যা থেকে অনেকে বেড়াতে আসত। দাদু দিদিমা মানুষ ভালো বাসে। কেউ রাতে ও থেকে যেত। গল্পে গল্পে রাত বেড়ে যেত। 

এই গ্রামে তার একটা মাটির ঘরের জন্য উপযুক্ত জায়গা আর মিলছেনা। যে কটা জায়গা দেখা হচ্ছে সব জায়গা তেই
বাধা আসছে।
শেষ পর্যন্ত ডাকবাংলো র ধারে কিছুটা খাস জায়গা আর কিছুটা বনকাটির রায় দাদুদের জায়গা মিলিয়ে তিন কাঠা জায়গা র উপরে একটা ঘর তোলার পরিকল্পনা হল।
এ পাড়া থেকে ওপাড়া। পূর্ব বাউড়ী পাড়া।
এখন ভাবে ওখানে কি থাকা যেত! না সম্ভব ছিল। কিন্তু তখন
এসব ভাবনা কি কারো মাথায় আসেনি।
টাকা কোথায়?  যে ঘর তুলবে।
সে এথোড়া বাড়ি কে গেল। পৈতৃক বাস্তুভিটা টুকু  কাকা জ্যাঠা দের সমান করে ভাগ করে কিনে নিতে বলল।
  তাঁরা রাজি হলেন। স্ট্যাম্প পেপারে লেখা হল। সামান্য কিছু টাকা হাতে নিয়ে সে ফিরল। সেই টাকা তেই শুরু হল ভিত কাটার কাজ। দক্ষিণ মুখী বৈঠক খানা র মতো একটা ঘর।
মাঝে সিঁড়ি। ওপারে আর একটা ঘর। মূল ঘর পূর্ব মুখী।
  ঘরের কাঠামোর জন্য তাল গাছের কাঁড়ি চাই। দাদু  চেয়ে চিন্তে তিনটে তালগাছ জোগাড় করল। কলিমউদ্দিন সেলিমুদ্দিন দুই ভাই তাকে ফেড়ে চেঁছে বানিয়ে দিল কাঠামো
তোলার উপযুক্ত করে। যৎসামান্য পয়সার বিনিময়ে। এরা পরেও তার আরও উপকার করেছে। দেয়াল তুলল বেশ কয়েকজন মিলে।  কাঠামো তুলল দিদিমার বাপের বাড়ি র
অমূল্য মিস্ত্রি আর বনকাটির বাদল বনমালী দের বাবা মদন মিস্ত্রী।
খড়ের ছাউনি। ছাউনির নিচে শরকাঠির পাকানো গোছা - 'গুরুল'। কড়িকাঠের উপর মোটা করে এই গুরুল পেতে তার উপর মাটি লেপে উপর কোঠা। তখন এমনটা হত।দপদপ করত।  পাতনের জন্য মোটা কাঠের পাটা কোথায় আর পাওয়া যাবে।
বিল্ল্বেশ্বর বাগদী ঘরের দেয়াল ঘষে মেজে ' খড়ুটি ' করে দিল। বড়ো ভালো মানুষ ছিল। নানা রকমের কাজ জানত।
অল্পস্বল্প রাজমিস্ত্রী র ও কাজ।
  বাকি টাকা আনার জন্য বেশ কয়েকবার এথোড়া যেতে হয়েছে। কখনও বা খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। অথচ যাতায়াতের খরচ আছে। ঐ টিউশনি র টাকা।
ঘর একটা দাঁড়াল বটে। কিন্তু এপাড়া ওপাড়া সংসার নিয়ে টানাটানি করা কি আর যায়। সীমানা প্রাচীর হয়নি। যা ভবিষ্যতে আর হবে না। বা ঐ ঘরে বসবাস ও হবে না। পৈতৃক ভিটা টুকু গেল মাত্র। অবশ্য থাকলেও কি তার থাকা হত ওখানে। 
  চারদিকে উইপোকার ঢিবি। কয়েক দিন গ্রামের কিছু ছেলে কে নিয়ে ওই ঘরে বসে পড়ায়। কোন রকমে একটি দরজা বসেছে। জানালার ফাঁকে বাঁশের কঞ্চি গোঁজা। দু এক দিন প্রায় সমবয়সী গরীব মানুষের ছেলেদের নিয়ে সন্ধ্যায় বা রাত্রে বসে। নানা আলোচনা ; গল্প হয়। ব্যস ; বড় জোর এই টুকু ই। রাত্রে আর থাকা হয়নি কখনো সেই ঘরে।থাকার মতো অবস্থা ও ছিলনা। কেননা মামারা চলে যাবার পর আবার বৃদ্ধ  দাদু দিদিমা একা। দেখতে তো সে ই। সাংসারিক এবং পারিপার্শ্বিক  এক বিশেষ পরিস্থিতি তে এই ঘর তোলা হয়েছিল। 
  ইতিমধ্যে পশ্চিম বঙ্গে রাজনৈতিক পালা বদল ঘটে গেছে।
সিদ্ধার্থ বাবুর জমানার কালো দিন মুছে নতুন দিন এসেছে।
  এসেছে বামফ্রণ্ট। পশ্চিম বঙ্গের ইতিহাসে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বদল। জ্যোতি বাবু ঘোষণা করেছেন রাইটার্স থেকে রাজ্য পরিচালিত হবেনা। ক্ষমতা র বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।  পঞ্চায়েত গঠিত হবে।  এই সময়ের কথা আলাদা ভাবে অন্য অধ্যায়ে  বলতে হবে।
'৭৮ এর অজয়ের প্রলয়ঙ্করী বন্যা। শত শত মানুষ গৃহ হীন।
মুলতঃ পূর্ববঙ্গীয় মানুষেরা যাঁরা নদী চর ; মানায় বাস করতেন। বসুধা সম্পূর্ণ ভেসে গেছে।  ভেসে যাওয়া মানুষ কে
উদ্ধার করতে আখের রস সিদ্ধ করার যে ' ডেঁক ' সে নিয়েই
বনকাটি র নিমাই সমাদ্দার রা জলে নেমে পড়েছে। সে ছিল অসম সাহসী।
অযোধ্যা হাই স্কুলের কোন রুম আর ফাঁকা নাই। শরণার্থী তে
ভর্তি। তাদের জন্য যথাসম্ভব শুকনো খাবার জোগাড় করা হয়েছে। কো- অপারেটিভ বিল্ডিং এর চত্বরে বিরাট বিরাট
কড়াই এ খিচুড়ি চেপেছে। প্রয়াত মোহন চ্যাটার্জি র নেতৃত্বে
ওদিক টা দেখা হচ্ছে। অনেকে স্বেচ্ছাসেবক এর দায়িত্ব পালন করছেন। রান্না শালা সামলানোর জন্য অনেক কে যুক্ত করা হয়েছে। আবার ভাণ্ডার সামলানোর জন্য দুজন পাকা লোককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  পানাগড় থেকে নেতৃত্ব স্থানীয় রা মাঝে মাঝে এসে খোঁজ খবর নিয়ে যাচ্ছেন। ত্রান সামগ্রী নিয়ে আসছেন কর্মী বাহিনী। স্বেচ্ছাসেবক রা।
গবাদি পশুদের জন্য খড় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। বাচ্চাদের দুধ। ওষুধ। চিকিৎসক। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও নানা ভাবে সাহায্য করছেন।  এই পরিস্থিতি সামলে ওঠা সহজ কথা
ছিলনা। ছোট খাটো বিতর্ক ; মনোমালিন্য ; বা ক্ষোভ বিক্ষোভ যে দেখা দিচ্ছে না তা নয়। বিনোদ মণ্ডল একদিন বেশ জোর গলায় বিলি বন্টন নিয়ে প্রতিবাদ করল। সাতকাহনিয়া র মানুষ দের ঘর দোর যায়নি। কিন্তু চরম অভাব। শর আর খড় দিয়ে
ছাওয়া ঘরের ভিতর আর কারো শুকনো নাই।ত্রিপল দরকার।  কেরোসিন তেলের হাহাকার। আমাদের নিজেদের ঘরে ও নাই।
হাফ প্যান্টের উপর গামছা বেঁধে হাতে লাঠি নিয়ে কেরোসিন তেল আনতে   সে আর কানু যাচ্ছে ইলামবাজার। তখন জল অনেক নেমে গেলেও কোথাও কোথাও হাঁটু জল আবার সাঁতার জল। বসুধা পার হওয়া দুষ্কর। তবু পার হয়েছে।
ইলামবাজার এ কানুর শ্বশুর মশাই প্রয়াত শ্রীধর পাল মশাই
পাঁচ লিটার  তেল জোগাড় করে দিলেন। ইলামবাজার হাই স্কুল বিল্ডিং এও বন্যা দুর্গত মানুষদের আশ্রয় শিবির। সেখানেও একই ব্যবস্থা করেছেন ওপারের কর্মী বাহিনী।
সাবধানে তেল  আনতে হচ্ছে। পাকা রাস্তা র উপর দিয়ে বড় বড় মাছ পেরিয়ে যাচ্ছে। লাঠি দিয়ে দু টো মেরে কোন রকমে তালপাতা দিয়ে ঝুলিয়ে ডাঙ্গাল হয়ে বাড়ি এসেছে।
পাড়া প্রতিবেশী দের লম্ফ জ্বলার মতো একটু একটু করে
দিতে হয়েছে। এক দল মানুষ কে নিয়ে কো অপারেটিভ বিল্ডিং এ যাওয়া হল। যাদের ঘরে খাবার নেই তারা এখানে খাবে। ব্যবস্থা হল।
  গুসকরা মোড়ে র কাছে অনেক মানুষ ; স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা
খাবার ; পোষাক দুর্গত মানুষ দের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
অনেকে গুসকরা রাস্তা ; মোরাম চাতালের উপর উঠে এসেছিলেন। মূলতঃ তাঁরা ই আর বসুধা বিলপাড়ার মানুষ রা
এই সাহায্য পেয়েছিলেন।
সে কি ভয়ংকর  দিন রাত। এখনো মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়। জল বাড়ছে। তবে এই রূপ নেবে তা ভাবা যায়নি।
মাটির বাঁধ এককিলোমিটার ভেঙ্গেছিল। সাতকাহনিয়া য়।
সে কি কাজে ইলামবাজার গিয়েছিল। ফেরার সময় দেখে বাঁধের গোড়ায় জল। বাঁধ যেন কাঁপছে।
  পূর্ব দিকটা ধূ ধূ সাদা। কমপক্ষে এক হাজার বিঘা দোফসলি জমি গড়ে তিন ফূট বালি চাপা পড়ে গেছে। কত চাষির লম্বা লম্বা আখ ছিল। আরও কত ফসল। আর মৃত গবাদি পশুর
দেহ ছড়িয়ে আছে সর্বত্র।বসুধা বরুল  বিল মাঠে সব চেয়ে
বেশী।
  জল বেশ দ্রুত ই নেমে গিয়েছিল। নীচে আরও দু তিন জায়গায় ভেঙ্গেছিল। এগারো মাইল গুসকরা মোড়ে গিয়ে
দেখা পেল আকুলিয়ার মানুষের। কি খবর। না মোটামুটি সব ঠিক আছে। হ্যাঁ গো ক্ষুদু দের কি খবর।  না। ঠিকই আছে।
কালিকাপুর ঠিক আছে। মৌখিরা র একতলা বিশিষ্ট ঘর জলে ভরে গিয়েছিল। সব মানুষ  জমিদার বূড়ো বাবু দের দোতালা দালান ঘর গুলো তে  আশ্রয় নিয়েছিল। সে প্রায় কম পক্ষে শ দুয়েক মানুষ। দুর্গাদালান জলে ভর্তি। প্রতিমার কাঠামো কোমর জলে দাঁড়িয়ে  আছে।
   ১০ ই আশ্বিন।বুধবার  দিন  তারিখ টা বুকে গেঁথে আছে এই এলাকার মানুষের। আশ্বিনে বৃষ্টি নামলে সেই ভয় আজও তাড়া করে।
  ----------- ----------- ----------- ----------- ------- ©  প্রণব ভট্টাচার্য
( খড়ুটি ' মানে হচ্ছে মাটির দেয়ালের উপর বালি মাটি দিয়ে প্লাষ্টার। কর্ণিক  এবং ঘষার পাটা দিয়ে  সমতল করন) 
গুরুল  - পাকা শর কাঠি দশ বারোটা আঁটি করে খড় দিয়ে বাঁধা। যেমন মাপ তেমন জুড়ে জুড়ে করা যায় 
ডেঁক  - আখের রস সিদ্ধ করার বড় কানা ওয়ালা গোলাকার পাত্র

Sunday, 11 July 2021

।।কথা - সাতকাহন।। ২৬ অধ্যায়

।। কথা - সাতকাহন।। ২৭ অধ্যায়
  একটা সম্পর্ক। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে।
   সহজেই কি তাকে মুছে ফেলা যায়! 
  হয়তো পুরোপুরি মুছে ফেলা যায়না। কিছু দাগ থেকে যায় ই।
বোলপুর বা ইলামবাজার কে সে ভুলতে পারেনা। অনেক স্মৃতি
জড়িয়ে আছে। অনেক কথা বাকী থেকে যাবে।
বোলপুরের পাক দেওয়া সিঁড়ি ওঠে দোতালার ঘরে বসে কত
রাজনৈতিক আলোচনা। তাত্ত্বিক তর্ক বিতর্ক।
একদিন মাষ্টার মশাই আছেন। আরও নেতারা আছেন।
হরশঙ্কর বাবু আছেন। তিনি তখন বোলপুর এর বিধায়ক।
পণ্ডিত মানুষ। আমাদের এত সহজ ভাবে মার্ক্সীয় অর্থনীতি ;
সমাজ নীতি বোঝাতেন। ঐ মেঝের পাতা চাটাই এর উপরে বসেই। আমরা ছাত্র। তাঁর পাঠ্যপুস্তক অনেকেই পড়েছেন।
একদিন আমিই মৃদু গলায় প্রশ্ন তুলেছিলাম একটা কমিউনিস্ট পার্টির কি কংগ্রেস এর মত দলের সাথে হাত মিলিয়ে চলা উচিৎ!  উত্তর প্রত্যাশিত। দেশে দক্ষিণ পন্থী দের
প্রভাব থেকে দেশ কে বাঁচাতে হবে। তারা দ্রুত উঠে আসছে।
কংগ্রেসের ভিতরে তারা যেমন রয়েছে যাদের সাথে দক্ষিণ পন্থী দের ভালো সম্পর্ক। আবার বিপরীতে একটা প্রগতিশীল
গণতান্ত্রিক অংশ রয়েছে। এরা নেহেরু র সমাজতান্ত্রিক মডেলে  বিশ্বাসী। এই অংশের সাথে কমিউনিস্ট দের সম্পর্ক রাখতে হবে। কৌশল গত কারনে ই। 
'৭০ এর শেষ দিক থেকে এখানে আসা। বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ এর সেই অসম লড়াই ; মুক্তিযোদ্ধা দের প্রাণ বলিদান
এখান থেকে বসে বসে শুনেছে। শুনে উদ্বেলিত হয়েছে - দেবদুলালের সংবাদ পরিবেশন বা ভাষ্যপাঠ কে। তিনি তাঁর
ঐ দুর্লভ কণ্ঠস্বরে একে এক অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন।
পাক বাহিনীর নির্মম পাশবিক অতাচার ; গণহত্যা। তার বিরুদ্ধে  এক জাতির মরণপন লড়াই। যার শুরু ভাষা আন্দোলন দিয়ে। বাঙ্গালী জাতির জন্য গর্ব হয়।
মনে প্রশ্ন জাগে শুধু নয় ঘৃণা হয়।  আমেরিকা বা চীনের পাকিস্তান কে সমর্থন
  প্রশ্নে। ভারতীয় সেনা বাহিনী ঢুকেছে পাকিস্তান আর্মি র সাথে লড়াই এ। মন সমর্থন করেছে। ইন্দিরা গান্ধী র প্রতি শ্রদ্ধা জেগেছে। ভারতের স্বাভাবিক বন্ধু সোভিয়েত রাশিয়ার নৌ বহর এগিয়ে আসছে। খুশী হয়েছে দু পারের মানুষ।
  স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। কি আনন্দ। কি আনন্দ আমাদের মতো ছেলেদের মনে।
' বাঙ্গালী ' এই বোধ আমার ভিতরে ছোট থেকেই কাজ করে।
  বাংলাদেশ একবার গেছি। বাংলা ভাষায় চারদিক ভরা।
কি যে আনন্দ হয়। সে তো অন্যকে বোঝানো যাবেনা।
  তেপান্তর নাট্য গ্রামে বাংলাদেশের এক নাটকের দল এসেছিল একবার। পাশাপাশি বসে গল্প করছি আমরা। খাবার সময় এলো। এক ভদ্রলোক পকেট থেকে সুগারের ওষুধ বের করলেন।
ওষুধের গায়ে বাংলায় লেখা গ্লিবিজাইড। মেটফরমিন।
বাংলা য় লেখা দেখে কি আনন্দ যে হল।
কোন ব্র‍্যাণ্ড নাম নেই। আমি ও সুগারের রোগী। দীর্ঘ দিন ওষুধ খাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম একটু পুরনো দিনের মানে এখন তো অনেক নতুন ওষুধ। নতুন জেনারেশন। এই ওষুধ নিচ্ছেন।
  বললেন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ই বিনামূল্যে পাওয়া যায়। কম দামের ওষুধে ই যদি কাজ হয়। বুঝতেই পারছেন গরীব দেশ।
  আর এদেশে লক্ষ লক্ষ ব্র‍্যাণ্ড। কোটি কোটি টাকা নিয়ে যায়।
  এমন এত বড় বিশাল উন্মুক্ত ' লুঠ ক্ষেত্র '।
বোলপুরের ঐ পার্টি অফিস  থেকে শিখেছি অনেক।  রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়েছে। মনীষা গ্রন্থালয় থেকে অনেক পেয়েছি। হীরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় ; 
  পণ্ডিত ; আমি মনে করি কমিউনিস্ট আন্দোলনে এমন পণ্ডিত আর এসেছেন কি না! তাঁর 'তরী হতে তীর ' পড়ে মুগ্ধ হয়েছি।
  রাহুল সাংকৃত্যায়ন পড়েছি আর অবাক হয়েছি এই জীবন
পথিকের জীবন দর্শনে। আর যত মৌল পাঠক্রম। রাশিয়ান শিল্পী দের আঁকা ছবি র বই  আমার শিল্প চেতনা কে সমৃদ্ধ করেছে।
   এই অফিসে বসেই যতদুর মনে পড়ে মুজিব হত্যার ঘটনাও
  শুনেছি।
জরুরী অবস্থা ঘোষিত হয়েছে। মানতে পারছিনা। তর্ক হচ্ছে।
এই অফিসে বসে ই নেতাদের সাথে। না কোন কমিউনিস্ট পার্টির  পক্ষে এটা মানা অসম্ভব বলে মনে হয়েছে। নানা প্রশ্ন।
   জয়প্রকাশ আসছেন। বিরোধিতা করা হচ্ছে। ব্যঙ্গ চিত্র আঁকতে হচ্ছে। স্টেশন এর একটা দেওয়ালে। আঁকছি।  মনে  কিন্তু নিয়ে ই আঁকছি।
  গোপাল দার হোটেলে খেয়ে  কিছু এলেমেলো ঘোরাঘুরি করে
আমাদের কয়েক জনের সারা রাত আলোচনা। আমি ই আলোচক। আমরা ছেলেরাই থাকি। ছোট্ট ঘর। 
  আজ আর কার কাকে মনে আছি জানি না। তবে সবাই ভুলে যাননি। শেষ বার শান্তি নিকেতন পৌষ মেলায় ছোট্ট স্টল দেওয়া হয়েছে। সেই সব বই তো আর নাই।
- আসুন।
- কি চিনতে পারছেন আমাকে। অনেক দিনের ব্যবধান।
ইলামবাজার বলাতেই চিনলেন। ' আরে ভাই এসো। এসো '
স্বীকার করলেন অস্তিত্বের ই সংকট। বসলাম।
  বাম গণতান্ত্রিক একত্রিত আন্দোলন ই পথ।
কেন যে সব লাল ঝাণ্ডা কর্মসূচি ভিত্তিক  একত্রিত হতে পারেনা। রাষ্ট্রের শ্রেণী চরিত্র বিশ্লেষণের এত কচকচি।
  না হয় শূন্য থেকে ই শুরু করতে হবে।
আর একবার ইলামবাজারে দুই জেলার যুক্ত সভা। বামফ্রন্টের। ইলামবাজারের সি পি আই এম নেতাদের সাথে আমার যথেষ্ট জানা চেনা বন্ধুত্ব। বর্ধমানের জেলা নেতারা আছেন। সভা শেষে একজায়গায় বসে গল্প হচ্ছে। বীরভূমের
সি পি আই এর জেলা সম্পাদক অপূর্ব মণ্ডল। একদিন একসাথে কাজ করেছি।কিন্তু  অনেক দিনের অদেখা।
- কি অপূর্ব দা আমাকে চেনা যায়। আমি প্রণব।
- আরে ভাই। তোমাকে কি ভোলা যায়। কি  ; কেমন আছো ইত্যাদি। যাঁরা আমার অতীত টা জানেন না তাঁরা কিছুটা অবাক।
এই যে। কোথাও একটা অতীত  সম্পর্ক বেঁচে থাকে।

  ক্রমাগত বৈষম্য বাড়ছে। আরও বাড়বে। পুঁজি র দাপট আরও  বাড়বে। মানুষ নিষ্পেষিত হয়ে যাবে। এত এত শিক্ষিত বেকার। আগামী দিন আরও ভয়াবহ। মানুষ অসহায়। এত অসহায়তা বোধ হয় আগে কখনো দেখা যায়নি। নানা স্তরীয়
অর্থনৈতিক বৈষম্য। সামাজিক অর্থনৈতিক নানা স্তর এই সময় কালে সৃষ্টি হয়েছে। আমি কোন সমাজ বিজ্ঞানী বা বোদ্ধা কেউ নই। আমি শুধু  যা দেখছি তা কোন এক পর্বে বলব।

  মুক্তি বার্তা কিন্তু সেই লাল ঝাণ্ডা য়। কাস্তে হাতুড়ি তেই।
যুবক যুবতী রাই ভবিষ্যৎ। সামনে তোমাদের অনেক অনেক  অনেক বড় লড়াই।গণতান্ত্রিক পথেই  সে লড়াই পরিচালনা করতে হবে। 
  রাষ্ট্র শক্তি র বিরুদ্ধে অনিবার্য লড়াই। আমি জানিনা তার রূপ কেমন হবে। 
পৃথিবীর সব রাষ্ট্রশক্তি বা তাদের প্রধানের হাতেই ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। ছদ্ম স্বৈরাচারী। শাসকের বজ্রমুষ্ঠি ক্রমাগত শক্ত হচ্ছে। পৃথিবী যেন ক্রমাগত দক্ষিণে হাঁটছে। ভবিষ্যৎ বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। 
আজ রাষ্ট্র পরিচালনা য় সেই পুরনো দিন কবেই হারিয়ে গেছে।  আজ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। অন্য কোন আদর্শ
সোভিয়েতের পরে নেই। ব্যতিক্রম  কিউবা। তার মানবিক মুখ দেখা যায়  ল্যাটিন আমেরিকার দেশ গুলিতে অন্তত স্বাস্থ্য পরিষেবার সাহায্য নিয়ে। সারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তার।
  এ সমাজ মানুষের ই রচনা। সাধারণ মানুষ আজ গৌণ।
   তবু্ও মানুষ। মানুষের ভিতর থেকে প্রতিবাদী সত্তাকে শোষণ করে নেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন।
  মানুষ তবুও জাগবে। পথ ই পথ দেখাবে। প্রতিবাদী মানুষ
পথে নামবেই। ভবিষ্যতে লড়াই অনিবার্য।
----------- ----------- ----------- ----------- -----------

তবু একদিন সংযোগের সব সুতো ছিঁড়ে যায়।
খুব কষ্টে ই।
বীরভূমের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে আমার কাজ কি মূল্য পাবে। ভাবি। আর কর্মসূচি ছাড়া কি সংগঠন বাঁচে।
অনেক কথাই মনে পড়ে। সিউড়ি অফিস ঘরটা। আমরা কয়েকজন সদ্য যুবক থাকতাম। লালচাঁদ ফুলমালী আসতেন।
তিনি তখন এম এল এ। এসেই অফিস বারান্দা সব ঝাঁট দিতে আরম্ভ করতেন। ডাঃ শরদীশ রায়ের উঁচু ধাপের চেম্বারের পাশ দিয়ে যেতাম। উনি থাকলে উঁকি দিতাম।  ফাঁকা থাকলে দু'একটা  কথা।
অন্য মনের মানুষ। সংকীর্ণতা ছিলনা।
মোরব্বা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এর আদি দোকানে আমাদের সকালের জলখাবার হত। খুব চেনা হয়ে গিয়েছিল বৃদ্ধ মানুষ টির সাথে। সেই বিশাল বিশাল তেঁতুল গাছ তলা হয়ে যে রাস্তা চলে গেছে নীচের দিকে। জেলখানার উঁচু প্রাচীর।
কোন কোন দিন বেড়াতে যেতাম ম্যাসাঞ্জোরের ব্যারেজের দিকে। কোন দিন করিধ্যা। বড় রসগোল্লা।
আবার কোনদিন তালতলা র ধার ধরে স্টেশনে র দিকে।
চুপচাপ স্টেশনে বসে বসে ভাবতাম। নির্জন স্টেশন আমার খুব ভালো লাগে। কি যেন ভাবতাম আমরা ; মনে আছে আর তোদের। কি জানি আমাকে ই আর মনে আছে কি না।
হাসিম ; সুনীল।  আজ আর কারও মনে নেই  কি যেন ভাবতাম।
----------- ----------- ----------- ----------- © প্রণব ভট্টাচার্য
নেট থেকে সংগৃহীত মার্কসের এই ভাস্কর্য। বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ

।।কথা - সাতকাহন।। ২৭ অধ্যায়

।। কথা - সাতকাহন।। ২৭ অধ্যায়
  একটা সম্পর্ক। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে।
   সহজেই কি তাকে মুছে ফেলা যায়! 
  হয়তো পুরোপুরি মুছে ফেলা যায়না। কিছু দাগ থেকে যায় ই।
বোলপুর বা ইলামবাজার কে সে ভুলতে পারেনা। অনেক স্মৃতি
জড়িয়ে আছে। অনেক কথা বাকী থেকে যাবে।
বোলপুরের পাক দেওয়া সিঁড়ি ওঠে দোতালার ঘরে বসে কত
রাজনৈতিক আলোচনা। তাত্ত্বিক তর্ক বিতর্ক।
একদিন মাষ্টার মশাই আছেন। আরও নেতারা আছেন।
হরশঙ্কর বাবু আছেন। তিনি তখন বোলপুর এর বিধায়ক।
পণ্ডিত মানুষ। আমাদের এত সহজ ভাবে মার্ক্সীয় অর্থনীতি ;
সমাজ নীতি বোঝাতেন। ঐ মেঝের পাতা চাটাই এর উপরে বসেই। আমরা ছাত্র। তাঁর পাঠ্যপুস্তক অনেকেই পড়েছেন।
একদিন আমিই মৃদু গলায় প্রশ্ন তুলেছিলাম একটা কমিউনিস্ট পার্টির কি কংগ্রেস এর মত দলের সাথে হাত মিলিয়ে চলা উচিৎ!  উত্তর প্রত্যাশিত। দেশে দক্ষিণ পন্থী দের
প্রভাব থেকে দেশ কে বাঁচাতে হবে। তারা দ্রুত উঠে আসছে।
কংগ্রেসের ভিতরে তারা যেমন রয়েছে যাদের সাথে দক্ষিণ পন্থী দের ভালো সম্পর্ক। আবার বিপরীতে একটা প্রগতিশীল
গণতান্ত্রিক অংশ রয়েছে। এরা নেহেরু র সমাজতান্ত্রিক মডেলে  বিশ্বাসী। এই অংশের সাথে কমিউনিস্ট দের সম্পর্ক রাখতে হবে। কৌশল গত কারনে ই। 
'৭০ এর শেষ দিক থেকে এখানে আসা। বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ এর সেই অসম লড়াই ; মুক্তিযোদ্ধা দের প্রাণ বলিদান
এখান থেকে বসে বসে শুনেছে। শুনে উদ্বেলিত হয়েছে - দেবদুলালের সংবাদ পরিবেশন বা ভাষ্যপাঠ কে। তিনি তাঁর
ঐ দুর্লভ কণ্ঠস্বরে একে এক অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন।
পাক বাহিনীর নির্মম পাশবিক অতাচার ; গণহত্যা। তার বিরুদ্ধে  এক জাতির মরণপন লড়াই। যার শুরু ভাষা আন্দোলন দিয়ে। বাঙ্গালী জাতির জন্য গর্ব হয়।
মনে প্রশ্ন জাগে শুধু নয় ঘৃণা হয়।  আমেরিকা বা চীনের পাকিস্তান কে সমর্থন
  প্রশ্নে। ভারতীয় সেনা বাহিনী ঢুকেছে পাকিস্তান আর্মি র সাথে লড়াই এ। মন সমর্থন করেছে। ইন্দিরা গান্ধী র প্রতি শ্রদ্ধা জেগেছে। ভারতের স্বাভাবিক বন্ধু সোভিয়েত রাশিয়ার নৌ বহর এগিয়ে আসছে। খুশী হয়েছে দু পারের মানুষ।
  স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। কি আনন্দ। কি আনন্দ আমাদের মতো ছেলেদের মনে।
' বাঙ্গালী ' এই বোধ আমার ভিতরে ছোট থেকেই কাজ করে।
  বাংলাদেশ একবার গেছি। বাংলা ভাষায় চারদিক ভরা।
কি যে আনন্দ হয়। সে তো অন্যকে বোঝানো যাবেনা।
  তেপান্তর নাট্য গ্রামে বাংলাদেশের এক নাটকের দল এসেছিল একবার। পাশাপাশি বসে গল্প করছি আমরা। খাবার সময় এলো। এক ভদ্রলোক পকেট থেকে সুগারের ওষুধ বের করলেন।
ওষুধের গায়ে বাংলায় লেখা গ্লিবিজাইড। মেটফরমিন।
বাংলা য় লেখা দেখে কি আনন্দ যে হল।
কোন ব্র‍্যাণ্ড নাম নেই। আমি ও সুগারের রোগী। দীর্ঘ দিন ওষুধ খাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম একটু পুরনো দিনের মানে এখন তো অনেক নতুন ওষুধ। নতুন জেনারেশন। এই ওষুধ নিচ্ছেন।
  বললেন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ই বিনামূল্যে পাওয়া যায়। কম দামের ওষুধে ই যদি কাজ হয়। বুঝতেই পারছেন গরীব দেশ।
  আর এদেশে লক্ষ লক্ষ ব্র‍্যাণ্ড। কোটি কোটি টাকা নিয়ে যায়।
  এমন এত বড় বিশাল উন্মুক্ত ' লুঠ ক্ষেত্র '।
বোলপুরের ঐ পার্টি অফিস  থেকে শিখেছি অনেক।  রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়েছে। মনীষা গ্রন্থালয় থেকে অনেক পেয়েছি। হীরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় ; 
  পণ্ডিত ; আমি মনে করি কমিউনিস্ট আন্দোলনে এমন পণ্ডিত আর এসেছেন কি না! তাঁর 'তরী হতে তীর ' পড়ে মুগ্ধ হয়েছি।
  রাহুল সাংকৃত্যায়ন পড়েছি আর অবাক হয়েছি এই জীবন
পথিকের জীবন দর্শনে। আর যত মৌল পাঠক্রম। রাশিয়ান শিল্পী দের আঁকা ছবি র বই  আমার শিল্প চেতনা কে সমৃদ্ধ করেছে।
   এই অফিসে বসেই যতদুর মনে পড়ে মুজিব হত্যার ঘটনাও
  শুনেছি।
জরুরী অবস্থা ঘোষিত হয়েছে। মানতে পারছিনা। তর্ক হচ্ছে।
এই অফিসে বসে ই নেতাদের সাথে। না কোন কমিউনিস্ট পার্টির  পক্ষে এটা মানা অসম্ভব বলে মনে হয়েছে। নানা প্রশ্ন।
   জয়প্রকাশ আসছেন। বিরোধিতা করা হচ্ছে। ব্যঙ্গ চিত্র আঁকতে হচ্ছে। স্টেশন এর একটা দেওয়ালে। আঁকছি।  মনে  কিন্তু নিয়ে ই আঁকছি।
  গোপাল দার হোটেলে খেয়ে  কিছু এলেমেলো ঘোরাঘুরি করে
আমাদের কয়েক জনের সারা রাত আলোচনা। আমি ই আলোচক। আমরা ছেলেরাই থাকি। ছোট্ট ঘর। 
  আজ আর কার কাকে মনে আছি জানি না। তবে সবাই ভুলে যাননি। শেষ বার শান্তি নিকেতন পৌষ মেলায় ছোট্ট স্টল দেওয়া হয়েছে। সেই সব বই তো আর নাই।
- আসুন।
- কি চিনতে পারছেন আমাকে। অনেক দিনের ব্যবধান।
ইলামবাজার বলাতেই চিনলেন। ' আরে ভাই এসো। এসো '
স্বীকার করলেন অস্তিত্বের ই সংকট। বসলাম।
  বাম গণতান্ত্রিক একত্রিত আন্দোলন ই পথ।
কেন যে সব লাল ঝাণ্ডা কর্মসূচি ভিত্তিক  একত্রিত হতে পারেনা। রাষ্ট্রের শ্রেণী চরিত্র বিশ্লেষণের এত কচকচি।
  না হয় শূন্য থেকে ই শুরু করতে হবে।
আর একবার ইলামবাজারে দুই জেলার যুক্ত সভা। বামফ্রন্টের। ইলামবাজারের সি পি আই এম নেতাদের সাথে আমার যথেষ্ট জানা চেনা বন্ধুত্ব। বর্ধমানের জেলা নেতারা আছেন। সভা শেষে একজায়গায় বসে গল্প হচ্ছে। বীরভূমের
সি পি আই এর জেলা সম্পাদক অপূর্ব মণ্ডল। একদিন একসাথে কাজ করেছি।কিন্তু  অনেক দিনের অদেখা।
- কি অপূর্ব দা আমাকে চেনা যায়। আমি প্রণব।
- আরে ভাই। তোমাকে কি ভোলা যায়। কি  ; কেমন আছো ইত্যাদি। যাঁরা আমার অতীত টা জানেন না তাঁরা কিছুটা অবাক।
এই যে। কোথাও একটা অতীত  সম্পর্ক বেঁচে থাকে।

  ক্রমাগত বৈষম্য বাড়ছে। আরও বাড়বে। পুঁজি র দাপট আরও  বাড়বে। মানুষ নিষ্পেষিত হয়ে যাবে। এত এত শিক্ষিত বেকার। আগামী দিন আরও ভয়াবহ। মানুষ অসহায়। এত অসহায়তা বোধ হয় আগে কখনো দেখা যায়নি। নানা স্তরীয়
অর্থনৈতিক বৈষম্য। সামাজিক অর্থনৈতিক নানা স্তর এই সময় কালে সৃষ্টি হয়েছে। আমি কোন সমাজ বিজ্ঞানী বা বোদ্ধা কেউ নই। আমি শুধু  যা দেখছি তা কোন এক পর্বে বলব।

  মুক্তি বার্তা কিন্তু সেই লাল ঝাণ্ডা য়। কাস্তে হাতুড়ি তেই।
যুবক যুবতী রাই ভবিষ্যৎ। সামনে তোমাদের অনেক অনেক  অনেক বড় লড়াই।গণতান্ত্রিক পথেই  সে লড়াই পরিচালনা করতে হবে। 
  রাষ্ট্র শক্তি র বিরুদ্ধে অনিবার্য লড়াই। আমি জানিনা তার রূপ কেমন হবে। 
পৃথিবীর সব রাষ্ট্রশক্তি বা তাদের প্রধানের হাতেই ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। ছদ্ম স্বৈরাচারী। শাসকের বজ্রমুষ্ঠি ক্রমাগত শক্ত হচ্ছে। পৃথিবী যেন ক্রমাগত দক্ষিণে হাঁটছে। ভবিষ্যৎ বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। 
আজ রাষ্ট্র পরিচালনা য় সেই পুরনো দিন কবেই হারিয়ে গেছে।  আজ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। অন্য কোন আদর্শ
সোভিয়েতের পরে নেই। ব্যতিক্রম  কিউবা। তার মানবিক মুখ দেখা যায়  ল্যাটিন আমেরিকার দেশ গুলিতে অন্তত স্বাস্থ্য পরিষেবার সাহায্য নিয়ে। সারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তার।
  এ সমাজ মানুষের ই রচনা। সাধারণ মানুষ আজ গৌণ।
   তবু্ও মানুষ। মানুষের ভিতর থেকে প্রতিবাদী সত্তাকে শোষণ করে নেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন।
  মানুষ তবুও জাগবে। পথ ই পথ দেখাবে। প্রতিবাদী মানুষ
পথে নামবেই। ভবিষ্যতে লড়াই অনিবার্য।
----------- ----------- ----------- ----------- -----------

তবু একদিন সংযোগের সব সুতো ছিঁড়ে যায়।
খুব কষ্টে ই।
বীরভূমের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে আমার কাজ কি মূল্য পাবে। ভাবি। আর কর্মসূচি ছাড়া কি সংগঠন বাঁচে।
অনেক কথাই মনে পড়ে। সিউড়ি অফিস ঘরটা। আমরা কয়েকজন সদ্য যুবক থাকতাম। লালচাঁদ ফুলমালী আসতেন।
তিনি তখন এম এল এ। এসেই অফিস বারান্দা সব ঝাঁট দিতে আরম্ভ করতেন। ডাঃ শরদীশ রায়ের উঁচু ধাপের চেম্বারের পাশ দিয়ে যেতাম। উনি থাকলে উঁকি দিতাম।  ফাঁকা থাকলে দু'একটা  কথা।
অন্য মনের মানুষ। সংকীর্ণতা ছিলনা।
মোরব্বা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এর আদি দোকানে আমাদের সকালের জলখাবার হত। খুব চেনা হয়ে গিয়েছিল বৃদ্ধ মানুষ টির সাথে। সেই বিশাল বিশাল তেঁতুল গাছ তলা হয়ে যে রাস্তা চলে গেছে নীচের দিকে। জেলখানার উঁচু প্রাচীর।
কোন কোন দিন বেড়াতে যেতাম ম্যাসাঞ্জোরের ব্যারেজের দিকে। কোন দিন করিধ্যা। বড় রসগোল্লা।
আবার কোনদিন তালতলা র ধার ধরে স্টেশনে র দিকে।
চুপচাপ স্টেশনে বসে বসে ভাবতাম। নির্জন স্টেশন আমার খুব ভালো লাগে। কি যেন ভাবতাম আমরা ; মনে আছে আর তোদের। কি জানি আমাকে ই আর মনে আছে কি না।
হাসিম ; সুনীল।  আজ আর কারও মনে নেই  কি যেন ভাবতাম।
----------- ----------- ----------- ----------- © প্রণব ভট্টাচার্য
নেট থেকে সংগৃহীত মার্কসের এই ভাস্কর্য। বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ

অন্য কিছু কথা আমার নিজের

আমার যে ধারাবাহিক চলছে 
" কথা -সাতকাহন " সে টা থামিয়ে আজ একটু অন্য রকম কথা বলি 
 কথা তো লতার মতো। 
 আমি এর আগে আপনাদের কাছে বারবার বলেছি এই সকল কথা 
দেখুন আমি খুব সাধারণ মানুষ। লেখাপড়া তেমন হয়নি। যেমন টা হলে মনে করা যেত কিছু একটা বটি। 
 নিজের লেখা বই নাই। 
ISSN  কোন পত্রিকা র সম্পাদক ও নই 
অতি সামান্য এক সাধারণ আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী মাত্র। 
এই চর্চা আমার অনেক দিনের 
 বলতে পারেন সেই কোন বালক বেলায় আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল  অঞ্জনা নদী তীরে চন্দনীগাঁয়ে    পোড়ো মন্দির খানা গঞ্জের বাঁয়ে 
 জীর্ণ ফাটল ধরা  এককোনে তারি 
অন্ধ নিয়েছে বাসা কুঞ্জবিহারী 
আমার মন কেমন করত      ঐ ভাঙ্গা মন্দির 
 অন্ধ ভিখারি ৷    লেজ কাটা কুকুর  ---
ঐ ভাঙ্গা মন্দির টা আমার বুকে গেঁথে গেছে সেই কবে কার  বালকবেলায় 
ভাঙ্গা মন্দির দেখলে দাঁড়িয়ে পড়ি। 
 এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছুটে যাই এখনও 
 খুঁজি তার গড়ে ওঠার ইতিহাস 
আবার আজকের করুন দশা 
 আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি টাকে বোঝার চেষ্টা করি 
পত্তন আর পতনের মাঝে তো একটি মহামুল্যবান "ত"।
তার খোঁজ পণ্ডিতেরা জানেন 
 আমি কোন পণ্ডিত নই। একাডেমিক লোক ই নই 
 গবেষক। কোন ভাবেই নই। 
 আমি চেয়েছি আমার চারপাশ টা বুঝতে
 মানুষ । মানুষ ই তো সব। 
 চাই মানুষ তার মাটির কথা জানুক। চিনুক নিজের শিকড়। শিকড় বিচ্ছিন্ন এই জাত 
 যদি সামান্যও পারি। 
কাঠবিড়ালি র মতো 
 মোটা মোটা দামী বই কোথায় পাব। 
 কেনার সামর্থ্য ছিলনা 
অনেক দামী বই  পুরনো মাটির বাড়িতে নষ্ট হয়ে গেছে 
যা গেছে তা গেছে 
আমার এই এলাকা কাঁকসা আউসগ্রাম এর জঙ্গল মহল  ইছাইঘোষ এর দেউল  অজয়ের এপার ওপার নিয়ে কুড়ি কিলোমিটার ব্যাসার্ধের জায়গায় আমার ঘোরাঘুরি 
 এখানেই এখন লিখি৷ এই ফেসবুকে র পাতায় 
কেউ আমন্ত্রণ না জানালে কোথাও লিখিনা 
আমার কোন উচ্চাশা নাই 
অনেক সময় ফেলে এসেছি। মনকে ই বলি " তুই ফেলে এসেছিস কারে - মন মন রে আমার 
 তবু আমার লেখা আপনাদের ভালো লাগে 
 চমৎকার সব মন্তব্য লিখে আমাকে প্রাণিত করেন 
 আপনাদের ধন্যবাদ 
 কি করব বলুন গবেষক এর মতো প্রতিটি বাক্যের তথ্য সূত্র দিতে পারিনা 
ভুলে গেছি কোথায় পড়েছি যেন 
রেফারেন্স বই এর খোঁজে কোথায় যাব বলুন 
 কে দেবে আমাকে বই 
এখন দিচ্ছে এই মাধ্যম। পাচ্ছি নানা পি ডি এফ 
 একবার সাময়িক সদস্য হয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের 
 সেণ্ট্রাল লাইব্রেরি তে গিয়েছিলাম দিন কতক 
 আমার দরকার ছিল  মাৎস্য ন্যায় পর্ব 
 একান্তে শুনলাম যে দামী দামী সব বই অধ্যাপক দের দখলে ই থাকে। তাই থাক 
 কোন পণ্ডিত তো আর উপেক্ষিত  অবজ্ঞাত গ্রামের ভাঙ্গা মন্দির টির কথা আপনাদের শোনাবেন না। না কোন গবেষক 
   আমি চেষ্টা করি 
আমি চেষ্টা করেছিলাম একটা পুকুরের নাম কেন 
" সন্ধান "। খুঁজে ছিলাম তার কথা কাহিনী 
 অনেক পণ্ডিত আমার লেখা পড়েন। 
লাইক ও দেননা। মন্তব্য তো দূরের কথা। ভাবি সত্যিই তো তাঁরা ওজনদার। আমার পোষ্ট তো নূতন কিছু নয়। তাতে লাইক দিয়ে নিজের ওজন কমাবেন কেন - 
 এই আপনারা এখানে যাঁরা আছেন তাঁদের ভালোবাসাই আমার পাথেয় 

কেউ কাউকে মনে রাখেনা 
 আমি চেষ্টা করেছিলাম মাত্র
এই কথাটি কাকে বলব     মনে রেখো

রয়ে গেল আরও কিছু কথা     বাকি 
 আমি যেন  সেই  বাতি ওয়ালা 
 মাটির প্রদীপ হাতে দাঁড়াই    ঘন অন্ধকারে
পথের বাঁকে

(মাটির প্রদীপ। আঞ্চলিক ইতিহাস। প্রণব ভট্টাচার্য এর লেখালেখি 
Blogger ইনস্টল করা থাকলে সুবিধা না হলে Crome এ তাড়াতাড়ি খোলে পার্সোনাল ব্লগ 
matirpadip.blogspot.com in 
খুলবেন।) 

(শুধু মাটির প্রদীপ  নামে একটি সহযোগী গ্রুপ আছে। সেখানে বন্ধুদের ভালো ইতিহাস বিষয়ক লেখা শেয়ার করি। নিজের পড়ার জন্য ও রেখে দিই। চর্চা হচ্ছেনা। চর্চা হচ্ছেনা। ভুল কথা। যাঁরা করার করছেন। এখানে অনেক ভালো পোষ্ট থাকে। 
 বন্ধুরা এখানে শেয়ার করতে পারেন। 
 এই মাধ্যম কেই এখন ভালো বেসেছি।)
(কথা - সাতকাহন ; শুধু মাত্র  আত্মকথন নয়। সেই সময় ; পারিপার্শ্বিক ; রাজনৈতিক পরিস্থিতি ; চারপাশের মানুষ  সকলকে নিয়ে এই আত্মজৈবনিক ধারাবাহিক। ভাবতে হচ্ছে এখানে কতটা বলা উচিৎ হবে। আমার ঐ লেখায় কোন কষ্ট কল্পনা নাই।)

।।কথা - সাতকাহন।। ২৮ পর্ব

।। কথা - সাতকাহন।। ২৮ অধ্যায়
ভবিষ্যতে এ ছেলেকে দেখবে কে। তার তো কোন আত্মীয় এখানে নাই। চাল চুলো কিছু নাই।   আত্মীয় স্বজনেরা একসাথে এখানে গ্রামের বাড়িতে 
 এলে থাকার খুব অসুবিধা হয়ে যায়।তখন নানা আত্মীয়ের এ বাড়িতে আসার চল ছিল। শ্রীচন্দ্রপুরের  শ্যামা ঠাকুমা রা আসতেন। তাঁর মেয়ে তরু মাসীকে নিয়ে।  নানা জায়গায় চালাঘরে বা বারান্দায় ভাগাভাগি করে থাকতে হত সবাইকে
মিলে মিশে  কখনও বা পশ্চিমে র একচালা বারান্দা ঘরে ও কাউকে  জায়গা নিতে হয়। উত্তর দিক থেকে সে চালাঘরে আবার মাঝে মাঝে সাপ এসে ও ঢোকে।  সেই ভয় নিয়েই
মাটিতে তাল পাতার চাটাই মানে তালাই কাঁথা পেড়ে ঘুমাতে হত । একসময় ঘুম আসে। এসেই যায়। এ নিয়ে কারও কোন ক্ষোভ বিক্ষোভ ছিলনা। 
কোন দুর্ঘটনা অবশ্য ঘটেনি কখনও। 
 দিনের দিকে অযোধ্যা থেকে অনেকে বেড়াতে আসত। দাদু দিদিমা মানুষ ভালো বাসে। কেউ রাতে ও থেকে যেত। গল্পে গল্পে রাত বেড়ে যেত। 

এই গ্রামে তার একটা মাটির ঘরের জন্য উপযুক্ত জায়গা আর মিলছেনা। যে কটা জায়গা দেখা হচ্ছে সব জায়গা তেই
বাধা আসছে।
শেষ পর্যন্ত ডাকবাংলো র ধারে কিছুটা খাস জায়গা আর কিছুটা বনকাটির রায় দাদুদের জায়গা মিলিয়ে তিন কাঠা জায়গা র উপরে একটা ঘর তোলার পরিকল্পনা হল।
এ পাড়া থেকে ওপাড়া। পূর্ব বাউড়ী পাড়া।
এখন ভাবে ওখানে কি থাকা যেত! না সম্ভব ছিল। কিন্তু তখন
এসব ভাবনা কি কারো মাথায় আসেনি।
টাকা কোথায়?  যে ঘর তুলবে।
সে এথোড়া বাড়ি কে গেল। পৈতৃক বাস্তুভিটা টুকু  কাকা জ্যাঠা দের সমান করে ভাগ করে কিনে নিতে বলল।
  তাঁরা রাজি হলেন। স্ট্যাম্প পেপারে লেখা হল। সামান্য কিছু টাকা হাতে নিয়ে সে ফিরল। সেই টাকা তেই শুরু হল ভিত কাটার কাজ। দক্ষিণ মুখী বৈঠক খানা র মতো একটা ঘর।
মাঝে সিঁড়ি। ওপারে আর একটা ঘর। মূল ঘর পূর্ব মুখী।
  ঘরের কাঠামোর জন্য তাল গাছের কাঁড়ি চাই। দাদু  চেয়ে চিন্তে তিনটে তালগাছ জোগাড় করল। কলিমউদ্দিন সেলিমুদ্দিন দুই ভাই তাকে ফেড়ে চেঁছে বানিয়ে দিল কাঠামো
তোলার উপযুক্ত করে। যৎসামান্য পয়সার বিনিময়ে। এরা পরেও তার আরও উপকার করেছে। দেয়াল তুলল বেশ কয়েকজন মিলে।  কাঠামো তুলল দিদিমার বাপের বাড়ি র
অমূল্য মিস্ত্রি আর বনকাটির বাদল বনমালী দের বাবা মদন মিস্ত্রী।
খড়ের ছাউনি। ছাউনির নিচে শরকাঠির পাকানো গোছা - 'গুরুল'। কড়িকাঠের উপর মোটা করে এই গুরুল পেতে তার উপর মাটি লেপে উপর কোঠা। তখন এমনটা হত।দপদপ করত।  পাতনের জন্য মোটা কাঠের পাটা কোথায় আর পাওয়া যাবে।
বিল্ল্বেশ্বর বাগদী ঘরের দেয়াল ঘষে মেজে ' খড়ুটি ' করে দিল। বড়ো ভালো মানুষ ছিল। নানা রকমের কাজ জানত।
অল্পস্বল্প রাজমিস্ত্রী র ও কাজ।
  বাকি টাকা আনার জন্য বেশ কয়েকবার এথোড়া যেতে হয়েছে। কখনও বা খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। অথচ যাতায়াতের খরচ আছে। ঐ টিউশনি র টাকা।
ঘর একটা দাঁড়াল বটে। কিন্তু এপাড়া ওপাড়া সংসার নিয়ে টানাটানি করা কি আর যায়। সীমানা প্রাচীর হয়নি। যা ভবিষ্যতে আর হবে না। বা ঐ ঘরে বসবাস ও হবে না। পৈতৃক ভিটা টুকু গেল মাত্র। অবশ্য থাকলেও কি তার থাকা হত ওখানে। 
  চারদিকে উইপোকার ঢিবি। কয়েক দিন গ্রামের কিছু ছেলে কে নিয়ে ওই ঘরে বসে পড়ায়। কোন রকমে একটি দরজা বসেছে। জানালার ফাঁকে বাঁশের কঞ্চি গোঁজা। দু এক দিন প্রায় সমবয়সী গরীব মানুষের ছেলেদের নিয়ে সন্ধ্যায় বা রাত্রে বসে। নানা আলোচনা ; গল্প হয়। ব্যস ; বড় জোর এই টুকু ই। রাত্রে আর থাকা হয়নি কখনো সেই ঘরে।থাকার মতো অবস্থা ও ছিলনা। কেননা মামারা চলে যাবার পর আবার বৃদ্ধ  দাদু দিদিমা একা। দেখতে তো সে ই। সাংসারিক এবং পারিপার্শ্বিক  এক বিশেষ পরিস্থিতি তে এই ঘর তোলা হয়েছিল। 
  ইতিমধ্যে পশ্চিম বঙ্গে রাজনৈতিক পালা বদল ঘটে গেছে।
সিদ্ধার্থ বাবুর জমানার কালো দিন মুছে নতুন দিন এসেছে।
  এসেছে বামফ্রণ্ট। পশ্চিম বঙ্গের ইতিহাসে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বদল। জ্যোতি বাবু ঘোষণা করেছেন রাইটার্স থেকে রাজ্য পরিচালিত হবেনা। ক্ষমতা র বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।  পঞ্চায়েত গঠিত হবে।  এই সময়ের কথা আলাদা ভাবে অন্য অধ্যায়ে  বলতে হবে।
'৭৮ এর অজয়ের প্রলয়ঙ্করী বন্যা। শত শত মানুষ গৃহ হীন।
মুলতঃ পূর্ববঙ্গীয় মানুষেরা যাঁরা নদী চর ; মানায় বাস করতেন। বসুধা সম্পূর্ণ ভেসে গেছে।  ভেসে যাওয়া মানুষ কে
উদ্ধার করতে আখের রস সিদ্ধ করার যে ' ডেঁক ' সে নিয়েই
বনকাটি র নিমাই সমাদ্দার রা জলে নেমে পড়েছে। সে ছিল অসম সাহসী।
অযোধ্যা হাই স্কুলের কোন রুম আর ফাঁকা নাই। শরণার্থী তে
ভর্তি। তাদের জন্য যথাসম্ভব শুকনো খাবার জোগাড় করা হয়েছে। কো- অপারেটিভ বিল্ডিং এর চত্বরে বিরাট বিরাট
কড়াই এ খিচুড়ি চেপেছে। প্রয়াত মোহন চ্যাটার্জি র নেতৃত্বে
ওদিক টা দেখা হচ্ছে। অনেকে স্বেচ্ছাসেবক এর দায়িত্ব পালন করছেন। রান্না শালা সামলানোর জন্য অনেক কে যুক্ত করা হয়েছে। আবার ভাণ্ডার সামলানোর জন্য দুজন পাকা লোককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।  পানাগড় থেকে নেতৃত্ব স্থানীয় রা মাঝে মাঝে এসে খোঁজ খবর নিয়ে যাচ্ছেন। ত্রান সামগ্রী নিয়ে আসছেন কর্মী বাহিনী। স্বেচ্ছাসেবক রা।
গবাদি পশুদের জন্য খড় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। বাচ্চাদের দুধ। ওষুধ। চিকিৎসক। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও নানা ভাবে সাহায্য করছেন।  এই পরিস্থিতি সামলে ওঠা সহজ কথা
ছিলনা। ছোট খাটো বিতর্ক ; মনোমালিন্য ; বা ক্ষোভ বিক্ষোভ যে দেখা দিচ্ছে না তা নয়। বিনোদ মণ্ডল একদিন বেশ জোর গলায় বিলি বন্টন নিয়ে প্রতিবাদ করল। সাতকাহনিয়া র মানুষ দের ঘর দোর যায়নি। কিন্তু চরম অভাব। শর আর খড় দিয়ে
ছাওয়া ঘরের ভিতর আর কারো শুকনো নাই।ত্রিপল দরকার।  কেরোসিন তেলের হাহাকার। আমাদের নিজেদের ঘরে ও নাই।
হাফ প্যান্টের উপর গামছা বেঁধে হাতে লাঠি নিয়ে কেরোসিন তেল আনতে   সে আর কানু যাচ্ছে ইলামবাজার। তখন জল অনেক নেমে গেলেও কোথাও কোথাও হাঁটু জল আবার সাঁতার জল। বসুধা পার হওয়া দুষ্কর। তবু পার হয়েছে।
ইলামবাজার এ কানুর শ্বশুর মশাই প্রয়াত শ্রীধর পাল মশাই
পাঁচ লিটার  তেল জোগাড় করে দিলেন। ইলামবাজার হাই স্কুল বিল্ডিং এও বন্যা দুর্গত মানুষদের আশ্রয় শিবির। সেখানেও একই ব্যবস্থা করেছেন ওপারের কর্মী বাহিনী।
সাবধানে তেল  আনতে হচ্ছে। পাকা রাস্তা র উপর দিয়ে বড় বড় মাছ পেরিয়ে যাচ্ছে। লাঠি দিয়ে দু টো মেরে কোন রকমে তালপাতা দিয়ে ঝুলিয়ে ডাঙ্গাল হয়ে বাড়ি এসেছে।
পাড়া প্রতিবেশী দের লম্ফ জ্বলার মতো একটু একটু করে
দিতে হয়েছে। এক দল মানুষ কে নিয়ে কো অপারেটিভ বিল্ডিং এ যাওয়া হল। যাদের ঘরে খাবার নেই তারা এখানে খাবে। ব্যবস্থা হল।
  গুসকরা মোড়ে র কাছে অনেক মানুষ ; স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা
খাবার ; পোষাক দুর্গত মানুষ দের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
অনেকে গুসকরা রাস্তা ; মোরাম চাতালের উপর উঠে এসেছিলেন। মূলতঃ তাঁরা ই আর বসুধা বিলপাড়ার মানুষ রা
এই সাহায্য পেয়েছিলেন।
সে কি ভয়ংকর  দিন রাত। এখনো মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়। জল বাড়ছে। তবে এই রূপ নেবে তা ভাবা যায়নি।
মাটির বাঁধ এককিলোমিটার ভেঙ্গেছিল। সাতকাহনিয়া য়।
সে কি কাজে ইলামবাজার গিয়েছিল। ফেরার সময় দেখে বাঁধের গোড়ায় জল। বাঁধ যেন কাঁপছে।
  পূর্ব দিকটা ধূ ধূ সাদা। কমপক্ষে এক হাজার বিঘা দোফসলি জমি গড়ে তিন ফূট বালি চাপা পড়ে গেছে। কত চাষির লম্বা লম্বা আখ ছিল। আরও কত ফসল। আর মৃত গবাদি পশুর
দেহ ছড়িয়ে আছে সর্বত্র।বসুধা বরুল  বিল মাঠে সব চেয়ে
বেশী।
  জল বেশ দ্রুত ই নেমে গিয়েছিল। নীচে আরও দু তিন জায়গায় ভেঙ্গেছিল। এগারো মাইল গুসকরা মোড়ে গিয়ে
দেখা পেল আকুলিয়ার মানুষের। কি খবর। না মোটামুটি সব ঠিক আছে। হ্যাঁ গো ক্ষুদু দের কি খবর।  না। ঠিকই আছে।
কালিকাপুর ঠিক আছে। মৌখিরা র একতলা বিশিষ্ট ঘর জলে ভরে গিয়েছিল। সব মানুষ  জমিদার বূড়ো বাবু দের দোতালা দালান ঘর গুলো তে  আশ্রয় নিয়েছিল। সে প্রায় কম পক্ষে শ দুয়েক মানুষ। দুর্গাদালান জলে ভর্তি। প্রতিমার কাঠামো কোমর জলে দাঁড়িয়ে  আছে।
   ১০ ই আশ্বিন।বুধবার  দিন  তারিখ টা বুকে গেঁথে আছে এই এলাকার মানুষের। আশ্বিনে বৃষ্টি নামলে সেই ভয় আজও তাড়া করে।
  ----------- ----------- ----------- ----------- ------- ©  প্রণব ভট্টাচার্য
( খড়ুটি ' মানে হচ্ছে মাটির দেয়ালের উপর বালি মাটি দিয়ে প্লাষ্টার। কর্ণিক  এবং ঘষার পাটা দিয়ে  সমতল করন) 
গুরুল  - পাকা শর কাঠি দশ বারোটা আঁটি করে খড় দিয়ে বাঁধা। যেমন মাপ তেমন জুড়ে জুড়ে করা যায় 
ডেঁক  - আখের রস সিদ্ধ করার বড় কানা ওয়ালা গোলাকার পাত্র

আমার দাদু। অযোধ্যা প্রা বিদ্যালয়ের রূপকার। প্র‍য়াত ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায়।। কথা - সাতকাহন।।

।। কথা - সাতকাহন।।  ২৯ অধ্যায়।
বারবার দাদুর কথা ফিরে ফিরে আসছে।
আসলে তার জীবনে দাদু দিদিমা র ভূমিকা মা বাবার মতো ই। আর দাদুই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। 
আবার ও আসবে। কেননা মানুষ টি একটা এলাকার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল কে পরিশীলিতভাবে গড়ে তোলার জন্য কি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন।
অনেকটা সময় পিছিয়ে যেতে হচ্ছে। সাল ১৯৪৭। ১৫ ই আগষ্ট। প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের উন্মাদনা।
অযোধ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র প্রয়াত নির্মল চট্টোপাধ্যায় এর স্মৃতি চারণ
" প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হচ্ছে। বিদ্যালয় থেকে প্রভাত ফেরী বেরিয়েছে ছাত্র ছাত্রী দের দল। আনুমানিক
জনা কুড়ি। ' বড়মাষ্টার ' গলায় ঝুলিয়েছেন হারমোনিয়াম।
সাথে লক্ষীনারায়ন চক্রবর্তী মশাই। তাঁর ও গলায় হারমোনিয়াম। সহ শিক্ষকেরা সাথে আছেন। লাইনের উপর
নজর রাখছেন। সামনের মেয়েরা কানন বালা ; পারুল বালা রা শঙখ ধ্বনি করছেন। গান হচ্ছে
    ' চক্রশোভিত ওড়ে নিশান /
        নব ভারতের বাজে বিষাণ '
রাস্তার দু পাশে উদ্বেলিত মানুষ। প্রথম তারা এভাবে প্রভাত ফেরী দেখছে ।
    এই হচ্ছে সেদিনের দৃশ্য। ' বড়মাষ্টার '। ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায়। তার দাদু। কানন বালা তার মা। পারুলবালা তার
' ফুল মা '।
নির্মল চট্টোপাধ্যায় বলে ওঠেন " ও গো এ শুধু একটা স্কুল মাত্র নয় ' - শিক্ষা ; সংস্কৃতির মন্দির "
  ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায় মশাই তাঁর শ্বশুর বাড়ি র গ্রাম টা কেমন দেখতে সাইকেলে চেপে বাঁকুড়া গোগড়া ; পাপুরদা ( শালতোড়া নিকট বর্তী)  গ্রাম থেকে এসেছিলেন এখানে।
শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামে। (আদুরিয়া - অমরপুর  এলাকা).।
  অযোধ্যা - বনকাটির পার্শ্ববর্তী এলাকা।
  প্রাচীন গোপভূম এর  এই সেনপাহাড়ী এলাকার এই সকল গ্রামে তখন কোন স্কুল ই নেই। কিছু গুরুমশাই এর পাঠশালা
মাজুরিয়া গ্রামে টোল আছে।
   অযোধ্যা গ্রামে পাঁচ গ্রামের মানুষেরা আসেন। হাট বসে।
তখনকার দিনের গঞ্জ। ধ্বজাধারী সাহা মশাই এর বৈঠক খানা বারান্দায় বিশিষ্ট মানুষ দের আড্ডার আসর বসে।
অনেকে আসেন ডাঙ্গাল গ্রামের  গোবিন্দ ঘোষ
নিমটিকুড়ি র ভোলানাথ বাসুরী ; বনকাটি র তারাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় ; সাতকাহনিয়া র  হাটু হালদার ; পাড়ার বনবিহারী সাহা মশাই সহ আরও অনেকে। যথেষ্ট সম্পন্ন মানুষ সব এঁরা। অনেক জমি জায়গা র মালিক। কাজের সূত্রে বাইরে অনেক কেই যেতে হয়। বাইরের প্রভাব তাঁদের মাধ্যমে আসে।
এলাকায় কোন স্কুল নাই। সকলে মিলে স্থির করেন স্কুল একটা স্থাপন করতেই হবে।
অযোধ্যা গ্রামের উত্তরে বিশাল আমবাগানের ' রথ তলার ডাঙ্গায় ' জায়গা দেখা হল। জমি দান করেছিলেন অযোধ্যার চট্টোপাধ্যায় পরিবারের প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সহ আরও অনেকে। হয়তো রেজিষ্ট্রী দলিল পরে হয়েছিল।
  ছোট্ট মাটির দেওয়ালের ঘর উঠল।
প্রধান শিক্ষক হিসাবে আমলাজোড়া গ্রামের রামসেবক মুখোপাধ্যায় মশাই কে আনা হল। অনাদি বন্দ্যোপাধ্যায় ; শশীভূষণ রক্ষিত মশাই রা সহ শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের পথ চলা শুরু হল। সেই হল প্রথম যুগ।
রামসেবক মুখোপাধ্যায় মশাই কয়েক বৎসর পর চলে গেলেন। 
একজন দক্ষ প্রধান শিক্ষকের দরকার।
ঠিক সেই সময়েই তাঁরা সন্ধান পেলেন শ্রীচন্দ্রপুরের অশ্বিনী মুখোপাধ্যায় মশাই এর ভগ্নীপতি ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায় মশাই এর। বাঁকুড়া থেকে গুরু ট্রেণিং করা এই মানুষ টি
একাধারে শিক্ষক আবার গান বাজনার ও লোক। পেশাদার যাত্রা দলে ও হারমোনিয়াম মাষ্টার। ' মোশন মাষ্টার '।
সেই গুণী মানুষ টি তখন  মানসিক পরিস্থিতি র কারণে কিছুদিনের জন্য এখানে রয়েছেন।
  এই এলাকার সব বিশিষ্ট মানুষ দের অনুরোধে তিনি রাজী হলেন এই বিদ্যালয় কে গড়ে তোলা বা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিতে।
শুরু হল এক নূতন অধ্যায়। এলাকায় একদল উদ্বুদ্ধ কর্মী যুব বাহিনী চাই। শুরু করলেন যাত্রা থিয়েটারের দল। ক্রমে সে দল প্রায় পেশাদারী দক্ষতা অর্জন করে। কলকাতা র রঙ্গালয়ে অভিনীত হচ্ছে যে পালা তা এখানে হচ্ছে। পরে পেশাদার দলের মতো নিজেদের ট্রাঙ্ক ভর্তি ড্রেস এবং অন্যন্য আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি। মিউজিক এর জন্য বাঁকুড়া থেকে ও উপযুক্ত লোক আনেন। আবার নদীর ওপারে র উদয়পুরের
রাধাশ্যাম কে ও তৈরি করে নেন। আদুরিয়া অমরপুর থেকেও
অভিনেতা নিয়ে আসেন। দুর্গাদাস দত্ত।
যাত্রা দলের ম্যানেজার শক্তিপদ চট্টোপাধ্যায় (মরন - ডাক নাম)। এ দল নিয়মিত পরে বিভিন্ন জায়গায় যাত্রা করতে গেছে।
  এই কর্মী বাহিনী কে সাথে নিয়ে শুরু হল স্কুল বিল্ডিং গড়ে তোলার কাজ। ইঁট পোড়ানো হল। ভোলানাথ সূত্রধর  রাজমিস্ত্রী। মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্য ভিক্ষা করা হচ্ছে।
অবলা কান্ত সরকার মশাই একটি মোটা শালগাছ দিলেন।
কোন সরকারি অনুমোদন ও নাই। শিক্ষক দের মাইনে ও নাই।
  ছাত্র ছাত্রী দের বাড়ি থেকে এবং দান সংগ্রহ করতে হয়।
চাল ; ডাল ; তরি তরকারি ইত্যাদি। টিকিট কেটে কবিগানের আসর বসানো হচ্ছে। মানুষ দের ভিতরে নারান বাবু সহ অন্যান্য যুবকের দল কাপড় পেতে সাহায্যভিক্ষা করছেন।
ননী গোপালের স্ত্রী ও আছেন। তাঁর হাতে আছে শেষ সম্বল
একগাছা চুড়ি। তিনি সে টা ই খুলে দিচ্ছেন। এই নারান বাবু ;
নারায়ণ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হাই স্কুল গড়ে তোলার জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন। তিনিই  অযোধ্যা হাই স্কুলের রূপকার। প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক হরিহর সিংহ মহাশয় এর বয়ানে যদিও তারও গোড়া পত্তনের শুরু  সেই
ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায় মশাই এর উদ্যোগে ই।
রজনীকান্ত হালদার মশাই গোপাল মাষ্টার কে নিয়ে এলেন
নদী তীরবর্তী এই নির্জন শান্তশ্রীর গ্রাম  সাতকাহনিয়া য়।
  এক উকিল সেন বাবুর ছেড়ে যাওয়া  বাড়ি টি তাঁর জন্য বরাদ্দ হল। কিছু ডাঙ্গা জমি দান করে তিনি এক ঘর ব্রাহ্মণ কে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করলেন। গ্রামের অধিকারী ; লায়েক ;
প্রভৃতি ব্রাহ্মণ পরিবার গুলি গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই।
  এখানে ছাত্র ছাত্রী দের বাড়ি তে রেখে দালান ঘরে বসিয়ে আলাদা ক্লাস হয়। আবাসিক ব্যবস্থা। ডাঙ্গাল গ্রামের গোবিন্দ ঘোষ মশাই এর ছেলে বিশ্বনাথ বাবুর অভিজ্ঞতা আমি নিজ মুখে শুনেছি। কঠোর শৃঙখলা ; নিয়মানুবর্তিতা। পঠন পাঠন এ
কোন ফাঁকি চলবে না। শিক্ষার প্রাথমিক ভিত যেন হয় মজবুত। এ দিকে তাঁর কঠোর দৃষ্টি।
  স্কুল এর পূর্ব দিকে দুটি বিরাট আমগাছ। মাটি দিয়ে গোড়া বাঁধানো। গোবর মাটি  দিয়ে নিকানো। আলপনা আঁকা।
উন্মুক্ত পরিবেশে পঠন পাঠন। গান " তোমারি গেহে পালিছ স্নেহে " " আজি যত তারা তব আকাশে "
স্কুল বিল্ডিং এর সামনে দক্ষিণে ফুলের বাগান। যে বাগানের বেড়া দেবার জন্য বাঁকুড়া র অমরকানন থেকে বেড়া কলমীর
ডাল নিয়ে এসেছেন। তার আগে এখানে এটি ছিলনা।
  যে বাগানে একদিন একশো দশ রকমের ফুলগাছ ছিল।
  যার জন্য ভবিষ্যৎ এ স্কুল পুরস্কার পাবে।
  ১৯৪৪ সালে বিদ্যালয় জেলা বোর্ডের অনুমোদন পায়।
  শিক্ষকদের ও মাস মাহিনা র অনুমোদন হয়। টিনের ছাউনি ব্যবস্থা হয়। রাণীগঞ্জ বাজার থেকে সে টিন কিনে আনা হয়। 
পরবর্তী সময়ে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছেন
গুণী শিক্ষকেরা। প্রয়াত রুধির কুমার সাহা ; প্রয়াত যোগেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ; সুভাষ বাবু। তাঁদের অন্যতম চণ্ডীরাম মুখোপাধ্যায়।
তখনকার দিনে মানে ১৯৪৪সালের ম্যাট্রিকুলেশন এ ফার্স্ট ডিভিশন। তারপর টেক্সটাইল টেকনোলজি তে ডিপ্লোমা।
অনায়াসে ই তিনি বাইরে মোটা মাহিনার চাকুরী করতে পারতেন। সম্ভবত নদীয়ার তাহেরপুর এ জুট টেকনোলজির কোন প্রতিষ্ঠানে ইন্সট্রাক্টর পদে যোগ দিয়েছিলেন।
  যে কোন কারনেই হোক ( যতদুর জানি সেখানকার আবহাওয়া সহ্য হয়নি)  তা ছেড়ে এখানে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। অযোধ্যা গ্রামে স্বাধীন ভাবে শাড়ী র ব্লক প্রিন্টিং এর
প্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন। খুবই গুণী মানুষ ছিলেন। ছিলেন জ্ঞান পিপাসু মানুষ। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের থেকে ; এই এলাকার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে এগিয়ে থাকা মানুষ।
  এলাকার বয়স্ক মানুষেরা আজও  ননীগোপাল চট্টোপাধ্যায় মশাই কে  তাঁর নামে নয়। চেনেন " বড় মাষ্টার " নামে। তাঁর নাম শুনলে 
কপালে হাত ঠেকানোর লোক কমে এলো।
প্রথম ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষার যে ব্যাচ তার তিন জন মেয়ে আর একজন ছেলে কে গোরু গাড়িতে চেপে দুর্গাপুরে সগড় ভাঙ্গা র  হাই স্কুলে পরীক্ষা দিতে যেতে হয়েছিল। সাথে তিনি আর একজন অভিভাবক। কাননবালা ; পারুলবালা ; ষষ্ঠী পদ দে
এবং অযোধ্যা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের এক মেয়ে। তাঁর নাম টি সঠিক সংগ্রহ করা যায়নি।
" বড় মাষ্টার " রা জন্মান। প্রকৃত শিক্ষকেরা জন্মান। দারিদ্র্য কে বরণ করে এঁরা আদর্শে অবিচল থাকেন। তাই বুঝি  এঁদের জন্য কোন রাজ্য বা রাষ্ট্রীয়
পুরস্কার বরাদ্দ হয়না।
----------- ----------- ----------- ----------- --- © প্রণব ভট্টাচার্য।
( শিক্ষা সমাচার ; কুনুর কথা প্রভৃতি পত্রিকায় আমার লেখা
প্রবন্ধ আছে। আমি কুনুর কথার পাতা গুলি তুলে দিলাম। ডাবল ট্যাপ করবেন তা না হলে আবছা দেখাবে)

এখন তেপান্তর

অনেক দিন পর প্রাণ ফিরে এসেছে। তেপান্তর নাট্য গ্রামের। 
 নূতন নাটকের রিহার্সাল চলছে। 
  দেবেশ চট্টোপাধ্যায় দেখে গেলেন। 
  অর্পিতা ঘোষের আসার কথা। 
  আর ও কারো কারো। 
 রাকেশ ঘোষ  রঞ্জন রা তো আছেই।