Sunday, 12 May 2019

বসুধা। বসুধা থেকে মিরাস মৌখিরা

বসুধা। আহা। কি সুন্দর মধুক্ষরা নাম।
কে কবে রেখেছিল। তা কি আজ আর বলা যায়। নামের উৎপত্তি কিভাবে। আন্দাজ করা যায়। বৌদ্ধ দেবী বসুধারা নাম থেকে আসতে পারে। কেননা একদিন এই অজয় অববাহিকায় তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের যথেষ্ট
প্রসার ঘটেছিলো। আবার ধর্ম্মমঙ্গলের অন্যতম এক কবি নরসিংহ বসুদের পৈতৃক
ভিটা ছিল এই গ্রামে। বসুধাম থেকে বসুধা।
অনেক ছড়ানো বিস্তৃত মৌজা এই লাট বসুধা। অজয়ের দক্ষিণ পাড় থেকেশুরু করে  একেবারে আউসগ্রামের জঙ্গলভূমি
পর্যন্ত। একদিন মাঝে তার বইত অজয়ের ই একটি জলধারা। বৃদ্ধ নদী। বেশ দহ ছিল সেই কালীদহ। পারাপার এর জন্য ছোট নৌকো চলত। চালাত চণ্ডালেরা। আবার শবদেহ দাহ ও করত। কাছে ই প্রাচীন শিব মন্দির। ওপারে ধর্মরাজ মন্দির। অনেক গুলি ছোট চারচালা শিব মন্দির ছিল।
কাছেই রূপাই চণ্ডী তলা। বিখ্যাত তার যাত্রা আসরের জন্য। একদিন ছিল ঘন অর্জুন পালাশের জঙ্গল। গালা বানাত লরি রা।
তারা খুব দুর্ধর্ষ ও ছিল শোনা যায়।
তখন এখানকার জঙ্গল ভূমিতে অনেক তান্ত্রিক ব্রহ্মচারীরা বিচরণ করেন। তাঁদের একজন বাবা দুলো রায়।
অনেকগুলো পাড়া। বাগুড়া। বাঘারায় নাম থেকে। কালু বীরের থান। সেখানে বেশ কয়েকটি জৈন এবং বৌদ্ধ ভগ্ন মূর্তির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। মেটে পাড়া।
জয়রাম নামের এক আদিবাসী নদীতীরে
নীল চাষ করে বেশ ধনী হয়েছিল।অনেক জমি জায়গা করেছিল। ওপার ইলামবাজার তখন নীল গালার বিখ্যাত গঞ্জ হয়ে উঠেছে। ইংরেজ দের সাথে তার ভালো সখ্য।
তার পরিবার বেশ ঘনিষ্ট হয়েছিল তাদের।
অজয়ের পলিমাটি দিয়ে গড়া। চাষের দারুন ক্ষেত্র। এখানকার সব্জী ছিল বিখ্যাত।
পূর্বপাড়ায় শাকদ্বীপি গ্রহবিপ্র দের পাড়া।
এঁরা বেশ প্রাচীন। এঁদের পরিবারের দুর্গাপূজার আয়োজন কমপক্ষে তিনশত বছর এর পুরনো। পূর্ব ঘোষ পাড়া। সেখানে ও আছেন কয়েক ঘর নিম্ন শ্রেণীর ব্রাহ্মণ। আর মেটে।  সদগোপদের ই প্রাধান্য।
এই পাড়া এবং অন্য পাড়াগুলি থেকে ও অনেক পরিবার বন্যা র ভয়ে উঠে উঁচু ডাঙ্গা জমিতে গিয়ে গ্রাম পত্তন করেন। গ্রামের নাম তাই ডাঙ্গাল। এখানকার সদগোপ ঘোষ বাবুরা একদিন যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন।
অনেক আদিবাসী মানুষ আছেন এখানে।
কোঁড়া ; মাহালী ; সাঁওতালরা। একদিন  চাষাবাদ এবং নীলকুঠীর কাজের জন্য এঁদের আনা হয়েছিল বা এসেছিলেন।
ডাঙ্গাল গ্রামের দু টি অংশ। একটি আদিবাসী
পাড়ার নাম রাজাপোতা ডাঙ্গা। ইতিহাস আছে তার। রূপাই চণ্ডী তলায় নবমী পুজার দিন ছাগ বলি দেওয়া হত। সদগোপ দের পক্ষ থেকে। আচার্য পদবীর ব্রাহ্মণ রা ছিলেন পুরোহিত। এঁদের আনানো হয়েছিল। পরে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এর দায়িত্বে যায়।
ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর সময় দশঘরার জমিদার রা বসুধা র জমিদারী কিনেছিলেন। তাঁদের ছিল কাছারী বাড়ি। সামনে ' রঙ বাগান '.।
এক সময় টোল শিক্ষায় বসুধা র খুব খ্যাতি ছিল। জ্যোতিষ চর্চা বা শিক্ষায় গ্রহবিপ্র গণৎকার ব্রাহ্মণ ভট্টাচার্য পরিবারের খুব নাম যশ খ্যাতি ছিল।
পশ্চিম পাড়া বা রূপুটে পাড়ার ঘোষ ; ভাণ্ডারী সদগোপ দের প্রতিপত্তি ছিল।
কামার ; কুমোর ; মাল ; কোঁড়া রা ও ছিলেন।
বসুধা র বিখ্যাত সব্জী গোরুর গাড়িতে করে যেত নানা হাটে। ইলামবাজার ; বোলপুর ; সগড়ভাঙ্গা র হাটে বাজারে।
অনেক অনেক কথা এই বসুধা - মিরাস এর। মিরাস কে চেনা যাচ্ছেনা। কবি নরসিংহ বসু র সময়ের নাম। আজকের মৌখিরা।
বসুধার একেবারে দক্ষিণে বিরাট বিল।তার পাড়ে হত ব্যাপক নীল চাষ। ছিল নীলকুঠি।
সেখানের জঙ্গলের নাম তাই নীলকুঠি র জঙ্গল। মৌখিরা কালিকাপুরের রায় জমিদার বাবুদের সাথে তাদের ওঠাবসা।
বিশাল ধনী জমিদার হয়ে উঠেছিলেন রায় বাবুরা। বসুধা থেকে মৌখিরা কালিকাপুর পর্যন্ত পুরো এলাকা জুড়ে তাদের দাপট ; কর্তৃত্ব। বিশাল বিশাল জমিদার বাড়ি ; সহ অনেক মন্দির তাঁরা নির্মান করিয়েছিলেন।
সে অনেক কথা। আলাদা পর্বে লিখব।
----------------৷৷৷৷৷৷৷  ------------------৷৷৷৷৷  -----

ফুল দিয়ে নাম আমার ঃ ফুলঝোড়

ফুল দিয়ে গ্রামের নাম তো এই বাংলা য় অনেক আছে। কিন্তু আমার যেমন প্রথমেই মনে আসে ফুলকুসুমা বা বাঁকুড়ার চলতি তে ফুলকুসমা র নাম; আবার পাথর বললেই পাথর প্রতিমার নাম।মনে গেঁথে আছে। প্রায় সবার ই। আমাদের আছে রাজকুসুম।আছে ফুলঝোড়। এই আমাদেরই কাঁকসা থানা এলাকার মধ্যে। নিশ্চয়ই ফুলঝোড়ের থেকে রাজ কুসুম বেশ মিষ্টি শুনতে। আজ ফুলঝোর এর কথা।জঙ্গল ঘেরা গ্রাম।কাঁটাবেড়ে র বিখ্যাত জঙ্গলের গায়ে গা লাগিয়ে। কাঁটাবেড়ে বা ভাল কথায় কাঁটা বেড়িয়া। তার কথা আলাদা করে বলতে হবে। সে অনেক কথা। আজ ফুলঝোড়।ঝোড় মানে ঝোঁপ। বুনো ফুলের ঝোপঝাড়ে ঘেরা গ্রাম। ছোট্ট গ্রাম। গ্রামের গ্রাম দেবী ছিলেন দেবী ফুলেশ্বরী। এই দেখুন আবার ফুলেশ্বের এর কথা মনে আসে। ফুলেশ্বরী নামে একটি সিনেমা র কথা ও মনে আসে। তরুন বাবুর মিষ্টি সিনেমা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এর মিষ্টি মিষ্টি গান। যাই হোক সে অন্য কথা। এখন এই গ্রামে আর সেই অন্য অতীত এর গ্রাম দেবী ফুলেশ্বরী র ধাতু মূর্তি নাই। কবেই চুরি হয়ে গেছে। কিন্তু একদিন ছিল। তবে কবে কার হাতে কখন তাঁর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তা জানা যায়নি। মূর্তি টি কিন্তু ছিল অত্যন্ত বৈশিষ্ট্য পূর্ণ। ভয়ংকরী ; অষ্টভুজা। উদরদেশ তাঁর গভীর। যেন ক্ষুধার্ত। তিনি কি দুর্গা? না কি বৌদ্ধ প্রভাবিত কোন দেবী। কেননা একদিন এই বিদবিহার অঞ্চলে তথা সমগ্র এলাকায় ছড়িয়েছিল তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্ম। সে প্রায় হাজার বছর আগের কথা। অনেক অনেক কথা। পরে হবে। ( কৃতজ্ঞতা - গ্রামবাসী প্রবীণ শিক্ষক চন্দ্রমোহন গোপ)